লক্ষ্মীপুর রামগঞ্জ উপজেলাতে দুই রাত্রে সরকারি হাসপাতালে অসুস্থ স্বামীর সেবা করতে গিয়ে দুইচোখ এক করতে পারেনি আসমা আক্তার । একদিন রেস্ট নিয়ে চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ সেন্টারে যাবে। কিন্তু অসুস্থ স্বামীকে এক বাসায় পাঠিয়ে নিজের বাসায় একদিন পরেই মৃত্যু হয় আসমার । মৃত্যুর খবরটি সাংবাদিক সমাজ সহ সর্বোস্থরে রক্তক্ষরণ হয়।

বিষয়টি মেনে নেওয়ার মতো নয়। শারীরিক অসুস্থতার মধ্যে স্ত্রীর মৃত্যুর খবর স্বামীকে কতোটা মর্মাহত করে যার স্ত্রী মারা গেছে শুধু সেই অনুধাবন করতে পারে। এই বিষয় আমি আরো কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলে যুক্তি দিয়ে একটা লেখা উপহার দিবো। পাঠক হয়তো আসমার মৃত্যু বিষয় নিয়ে লেখা পাওয়ার জন্য অধিক আগ্রহে আছে। তাই প্রচুর ঘাড় ও মাথা ব্যথা,চোখে ঝাপসা দেখার মাঝে সামান্যতম লেখার চেষ্টা করছি ।

আট কিংবা নয়ই অক্টোবর চট্টগ্রাম প্রশিক্ষণ সেন্টার আবাসিক রুমে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আসমা। খবর পেয়ে উপজেলা সমবায় অফিস আনোয়ার হোসেনকে রাত নয়টার দিকে মুঠোফোনে জানাই। আনোয়ার সাহেব তাৎক্ষণিক যোগাযোগ করলে কতৃপক্ষ ডাক্তার এনে চিকিৎসা করায়। এর দুই দিন পরে ছূটি নিয়ে রামগঞ্জে বাসাতে পৌছে এবং ডাক্তার দেখিয়ে ঔষধ নেয়।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আমাকে বলে চট্টগ্রামে ফোন দিয়ে প্রশিক্ষণের পরীক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত হতে। শনিবার ষোল অক্টোবর জানালে হাসিমুখে বলে উঠে আমি পরীক্ষা শেষ করে ঢাকা যাবো তুমি যায়যায়দিন প্রতিনিধি সম্মেলন শেষ করে আমাকে সময় দিবা,আমি কিছু কিনা কাটা করবো। ঠিক আছে বলেই বাসা থেকে সম্মতি নিয়েই বের হয়ে চৌদ্দই অক্টোবর শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টা কিংবা দশটার দিকে বাসা উপস্থিত হই।

দেড় হতে দুই ঘন্টা থাকার পরে একসহকর্মীর ফোন দেওয়ায় বাসা থেকে বের হতে হয়েছে। বাহির হওয়ার সময় আসমা বলে উঠলো নামাজের পর আমার বাসাতে খাবার চেষ্টা করবেন। ঠিক আছে চেষ্টা করবো বলে স্থান ত্যাগ করলাম। শহর থেকে দুরে নামাজ পড়ে ফিরার সময় একগুনীজনের অনুরোধে তার বাসাতে খেতে হয়। বিষয়টি মুঠোফোনে আসমা নিশ্চিত হবার পরে বললো,খেয়েছো ভালো হয়েছে। তবে শহরে ফিরলে আমার বাসাতে আসলে খুশি হবো।

শহরে আসার পূর্বেই প্রচণ্ডভাবে পেট ব্যথা শুধু হয়। দ্রুতগতিতে প্রথম স্ত্রীর বাসা গিয়ে ওয়াশরুমে যাই। এদিকে আসমা একের পর এক ফোন দেওয়ায় দ্রতগতিতে চারটার দিকে বাসা পৌছি। দেখি শুইয়ে আছে। এমন সময় আমি ওয়াশরুমে যাই। ওয়াশরুম থেকে বাহির হতে না হতে আমার প্রচণ্ড জ্বর,মাথা ব্যথা অনুভব হয়। দ্রুত বিছানাতে শুইয়ে পড়লে একটা খাতা গায়ে দেয়।

কাথা দেওয়ার পরেও প্রচণ্ড ঠান্ডা অনুভব হলে আসমা একটি কম্বল বের করে আমার গায়ে দিয়ে হাসতে হাসতে বলে উঠলো মা মেয়ের জামাইয়ের জন্য কম্বলটি দিয়েছে। জামাইয়ে আগে গায়ে দিলো। জ্বর বেশি দেখে সাতটার দিকে বলে উঠে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার দরকার। বললাম কাল শনিবার তোমার পরীক্ষা চট্টগ্রামে আর আমার প্রতিনিধি সম্মেলন ঢাকাতে। দুইজনেই সকালে বাহির হতে হবে তুমি ঘুমিয়ে পড়,আমি ঔষধ নিয়ে বাসা গিয়ে শুইয়ে পড়বো।

আমি বাসা থেকে বের হয়ে থানা গিয়ে পাখা বন্ধ রেখে ওসি তদন্ত সাহেবের রুমে কিছুক্ষন বসে থেকে বাসা ফিরে ছোট ছেলেকে ডেকে কম্বল দিতে বলে শুইয়ে পড়ি। রাত দশটার শরীরিক অবস্থায় এতোটাই খারাপ সহয্য করার শক্তি নেই। কোন উপায় না দেখে রামগঞ্জ প্রেস ক্লাবের গ্রুপে হাসপাতালে নেওয়ার অনুরোধ করে সহকর্মীদের সাহায্য চাই। স্ত্রী রোজিনা ও ছেলেরা এরি মাঝে শরীরে পাচটা কম্বল দিয়ে চেপে ধরে রাখে।

অবশেষে সহকর্মী রাজু আহমেদের সহযোগীতা রামগঞ্জ সরকারি হাসপাতালে রাত সাড়ে দশটা কিংবা এগারোটার দিকে ভর্তি হই। রাত একটার দিকে আসমা হাসপাতালে উপস্থিত হয়। রাত তিনটার দিকে আমার প্রচণ্ড জ্বর উঠলে ডাক্তার জ্বর কমানোর ইনজেকশন দিলে একা আধা কিলোমিটার দুরে দৌড়ে গিয়ে ইনজেকশন নিয়ে আনলে ডাক্তার আমার শরীরে পুশ করে। রাত সাড়ে চারটার দিকে আমার শরীর ভিজা কাপড় দিয়ে মুচে কান্না কন্ঠে বিদায় নিয়ে চট্টগ্রামে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়। যাবার সময় বলে তুমি চিন্তা করবা না আমি পরীক্ষা দিয়েই ফিরে আসবো। আমি শুধু বললাম তুমি এতো ফেরেশান হইও না,এখানে আমার অযত্ন হবে না।

শনিবার পরীক্ষা দিয়েই চট্টগ্রাম থেকে আবার হাসপাতালে। রোববার বিকেলে একটু সুস্থতা অনুভব হলে রিলিজ নিয়ে আমি রোজিনার বাসা এবং আসমা নিজ বাসাতে যায়। সন্ধ্যার পরে আমাকে মুঠোফোনে বলে আপনার বোন সুফিয়া বলতেছে ওই বাড়ি যাবার জন্য। আমি বললাম একা যেতে পারবা কি না? পারবো বলাতেই বলেছি ঠিক আছে যাও।

রোববার বেলা আনুমানিক একটার দিকে আসমা আমাকে ফোন দিয়ে বলে আপনি একটু আনোয়ার ডাক্তারের চেম্বারে আসেন,আমি একটু দেখে যাবো। এর কিছুক্ষন পরেই মেয়েটা আমার বুকের উপর বসে হ্যাপী বার্থডে বলে উঠে। ভাবছি আসমার জন্য বাহির হতেই হবে। এই সুযোগে যেই কোন দোকান থেকে একটি কেকে এনে দিবো।

অনেক কস্টে বাসা থেকে নেমে একটি মিস্টি দোকানে গিয়ে একটি কেক নিয়ে ছেলেকে বাসা পাঠিয়ে আসমার সাথে দেখা করে বাসা ফিরে শুইয়ে পড়ি। সন্ধ্যার পরে মোবাইলে একটি ছবি তুলে দেওয়া হয় মেয়ের জম্মদিনের একটা লেখা পোস্ট দিতে। যা লেখতে তিন ঘন্টার বেশী সময় লাগে। রাত দশটার দিকে আসমা ফোন দিয়ে বলে আমি খুব অসুস্থ ঘুমের ঔষধ এনেছি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়বো। আমি শুধু বলেছি ‘ঠিক আছে। আঠারো অক্টোবর বেলা দুইটা কিংবা আধা ঘন্টা আগে পরে হবে।

আমাকে ফোন দিয়ে বলে উঠে তুমি মিথ্যা কথা বলেছ আমার সাথে,কাল সন্ধ্যায় তুমি মেয়ের জম্মদিন আনন্দের সাথে পালন করেছ। আমি বললাম,এখানো আমার শরীর খুব দুর্বল হওয়ায় বাসা থেকে বাহির হওয়া তো দুরের কথা শোয়ার থেকে উঠে বসতেও পারছি না।

কথা শেষ না হতে বলে উঠে আর আসতে হবে না আমি চট্টগ্রামে চলে যাচ্ছি। আমি প্রতিত্তোরে কোন কথাই বলি নাই এই কারনে তাকে কোন বিষয় বাধা দিলে শুনে না। যখন যা মনে চায় তাই করে। ফোন কেটে দেওয়ার পরে সম্ভাবত আমি ঘুমিয়ে পড়ি।